মানসিক প্রতিবন্ধী আবদুল্লা। সেই সঙ্গে শ্বাসনালিতেও সমস্যা তাঁর। কথা বলতে অসুবিধা হয়। সেই আবদুল্লার হাতের জানতেই শ্যামা কালীর শক্তিদায়িনী রূপ ফুটে উঠছে সোনারপুরের স্টুডিওতে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সাম্প্রদায়িকতার ভেদাভেদকে ভুলিয়ে দিয়েছেন মৃৎশিল্পী বুদ্ধদেব চিত্রকর ও আবদুন্না। বুদ্ধদেবের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কালী প্রতিমা গড়ছেন বিশেষ সক্ষম আবদুল্লা। আবদুল্লার মধ্যে নামী মৃৎশিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। সোনারপুরের গোবিন্দপুরে পোটোর মোড়ের মৃৎশিল্পীর স্টুডিওতে আবদুল্লা কালীর মূর্তি গড়ছেন। খড় দিয়ে ঠাকুরের কাঠামো বাঁধা থেকে ছাঁচ তৈরি, রং করা সবেতেই সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। উৎসাহে খামতি নেই। মৃৎশিল্পীর বাড়িতে থেকেই দিনরাত ধরে প্রতিমা গড়ার কাজ রপ্ত করছেন আবদুল্লা। ছোট থেকে বড় হয়েছেন হোমে। তবে গোবিন্দপুরের ‘আপনজন’ হোমে থাকার সময় থেকেই তাঁর প্রতিমা গড়ার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখা দেয়। হোমের দুর্গাপ্রতিমা গড়ার সময় আবদুন্না সারাক্ষণ সেখানে বসে প্রতিমা গড়ার কাজ রপ্ত করতেন। মৃৎশিল্পী বুদ্ধদেব চিত্রকরের কথায়, ‘ওই হোমে গত ১৭ বছর ধরেই দুর্গাপ্রতিমা গড়া হয়। মাস দুয়েক ধরে সেই প্রতিমা গড়ার কাজ চলে। সেই সময়ই আবদুল্লার প্রতিমা গড়ার কাজের উৎসাহ নজরে আসে। দুর্গাপ্রতিমা গড়ার সব কাজেই আমাদের সঙ্গে হাত লাগায় আবদুল্লা। তখনই বুঝতে পারি ওর মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আবদুল্লাকে স্টুডিওতে কাজে নিয়ে নিই। মাত্র এক বছরেই বেশ ভাল প্রতিমা গড়ার কাজ রপ্ত করেছে আবদুল্লা।’ আপনজন হোমের কর্ণধার কল্লোল ঘোষ জানান, এই কাজে যুক্ত হয়ে আবদুল্লার শুধু কাজের সংস্থান বা সমাজের মূল স্রোতে ফেরা তা নয়, বর্তমান অস্থির সময়ে একটা সুন্দর নিদর্শনও তৈরি হয়েছে।